একাধিক গবেষণায় একাথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে পালং শাকের রসে উপস্থিত নানাবিধ উপাকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে আরও নানাবিধ উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, পেশির ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং হার্ট অ্যাটাকের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। তবে এখানেই শেষ নয়, রোজের ডায়েটে পালং-এর রসকে অন্তর্ভুক্ত করলে মস্তিষ্ক থেকে হার্ট হয়ে শরীরের ছোট-বড় সব অঙ্গেরই ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ফলে আরও যে যে উপকারগুলি পাওয়া যায়, সেগুলি হল…
১.ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে:
একেবারেই ঠিক শুনেছেন বন্ধু! একাধিক স্টাডিতে একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে নিয়মিত ১০০ গ্রাম করে সেদ্ধ পালং শাক অথবা এক গ্লাস পলং-এর রস খাওয়া শুরু করলে শরীরে ডায়াটারি ফাইবারের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে বহুক্ষণ পেট ভরা থাকে। আর এমনটা হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই বারে বারে খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। আর কম পরিমাণে খাওয়ার কারণে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতেও সময় লাগে না। তাই তো বলি বন্ধু, পুজোর আগে যদি ওজন কমিয়ে ফেলার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে রোজের ডায়েটে এই প্রকৃতিক উপাদানটিকে অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না যেন!
২. সূর্যের অতিবেগুলি রশ্মির হাতে থেকে ত্বক রক্ষা পায়:
পালং শাকের অন্দরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, যা অতি বেগুনি রশ্মির কারণে যাতে ত্বকের কোনও ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বক পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা যেমন কমে, তেমনি স্কিন ক্যান্সারের মতো রোগ দূরে থাকতেও বাধ্য হয়। এক্ষেত্রেও পালং শাক এবং জল এক সঙ্গে মিশিয়ে পেসস্টা বানিয়ে মুখে লাগাতে হবে। তাহলেই দেখবেন দারুন উপকার পাবেন।
৩. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগে দূরে থাকতে বাধ্য হয়:
পালং শাকে উপস্থিত ফ্লেবোনয়েড শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে ক্যান্সার সে জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। ফলে এই মারণ রোগটি ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। অনেক টাকার মালিক হয়ে ওঠার স্বপ্ন পূরণ করতে আজ রাতে শ্রী কৃষ্ণের পুজোর আয়োজন করতে ভুলবেন না! বাড়ির এই জায়গায় লাফিং বুদ্ধার মূর্তি রাখলে দেখবেন দুঃখ আপনাকে ছুঁতে পর্যন্ত পারবে না!
৪. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে:
এই শাকটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন, লুটেইন এবং জ্যান্থিন, যা রেটিনার ক্ষমতা বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, এই শাকটিতে উপস্থিত ভিটামিন এ আই আলসার এবং ড্রাই আইয়ের মতো সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. চুল পড়ার হার কমে:
অতিরিক্ত হারে চুল পড়ছে নাকি? তাহলে আজ থেকেই চুলের পরিচর্যায় পালং শাককে কাজে লাগাতে শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেই পাবেন। আসলে এই শাকটিতে উপস্থিত আয়রন, হেয়ার ফলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি দেদের অন্দরে লোহিত রক্ত কণিকার ঘাটতি দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে পালং শাকের রস বানিয়ে ভাল করে চুলে লাগিয়ে কিছু সময় রেখে দিতে হবে, সময় হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে চুলটা। আর যদি এইভাবে চুলের পরিচর্যা করতে মন না চায়, তাহলে নিয়মিত পালং শাকের রসও খেতে পারেন। কারণ এমনটা করলেও সমান উপকার পাওয়া যায়।
৬. ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়:
পটাশিয়াম, ফলেট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই শাকটি যদি প্রতিদিন খাওয়া যায়, তাহলে মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু অংশ এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে স্মৃতিশক্তি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে পটাশিয়ামের দৌলতে মনোযোগ ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে।
৭. ত্বক ফর্সা হয়ে ওঠে:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে পালং শাকে উপস্থিত ভিটামিন কে এবং ফলেট ত্বককে ফর্সা করে তোলার পাশাপাশি ডার্ক সার্কেলকে দূর করতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে পালং শাক দিয়ে বানানো পেস্ট যেমন মুখে লাগাতে পারেন, তেমনি পালং শাকের রস খেলেও সমান উপকার পাওয়া যায়।
৮. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে:
আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে পলং শাকে রয়েছে বিপুল পরিমাণে পটাশিয়াম। এই খনিজটি শরীরে প্রবেশ করা মাত্র সোডিয়াম বা নুনের হারিয়ে যাওয়া ভারসাম্য ফিরে আসে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, পালং শাকে থাকা ফলেটও ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো হাই ব্লাড প্রসেরা ভুগতে থাকা রোগীদের নিয়মিত পালং শাকের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
৯. চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে:
পালং শাকের অন্দরে থাকা ভিটামিন বি,সি, ই,পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম,আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, স্কাল্পের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে। সেই সঙ্গে হেয়ার ফলিকেলের অন্দরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না।
১০. পেশির ক্ষমতা বাড়ে:
জার্নাল অব কার্ডিওভাসকুলার নার্সিং- এ প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে পালং শাকের অন্দরে লুকিয়ে থাকা নানা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, হার্টের পেশির কর্মক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সারা শরীরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অন্যান্য পেশির শক্তি বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে একদিকে যেমন হাইপারলিপিডেমিয়া, হার্ট ফেলিওর এবং করোনারি হার্ট ডিজিজের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে, তেমনি সার্বিকভাবে শরীরের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
১১. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
অ্যামাইনো অ্যাসিড হল এমন একটি উপাদান, যা মেটাবলিজম রেট বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে হজম ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রচুর মাত্রায় রয়েছে পালং শাকে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন এই শাকটির রস নিয়মিত খেলে কী হতে পারে!
১২. ত্বকের অন্দরে প্রদাহ কমে:
পালং শাকের অন্দরে রয়েছে নিয়োক্সেথিন এবং ভায়োল্যাক্সানথিন নামক দুটি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা দেহের পাশাপাশি ত্বকের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর ত্বকের ভিতরে প্রদাহের মাত্রা কমলে নানাবিধ স্কিন ডিজিজ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
১৩. স্ট্রোকের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে:
লুটেইন নামে একটি বিশেষ উপাদানের সন্ধান পাওয়া যায় পালং শাকের শরীরে। এই উপাদানটি ব্লাড ভেসেলের অন্দরে কোলেস্টেরল জমার হার কমিয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকবাবেই স্ট্রোক, অ্যাথেরোস্কেলোসিস এবং হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা কমে।
১৪. ব্রণর প্রকোপ কমে:
পরিমাণ মতো পালং শাক নিয়ে তার সঙ্গে অল্প পরিমাণে জল মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর সেই পেস্টটা ভাল করে মুখে লাগিয়ে কম করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। সময় হয়ে গেলে মুখটা ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে প্রতিদিন ত্বকের পরিচর্যা করলে ত্বকের অন্দরে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদানেরা বেরিয়ে যেতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে সিবামের উৎপাদনও কমবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্রণর প্রকোপ কমতে সময় লাগবে না। প্রসঙ্গত, নিয়মিত পালং শাকের রস খেলেও কিন্তু সমান উপকার পাওয়া যায়। তাই পালং শাক দিয়ে বানানো ফেসপ্যাক যদি মুখে লাগাতে ইচ্ছা না করে তাহলে পালং শাকের জুসও খেতে পারেন।